প্রতিজ্ঞা বজায় রাখলেন সূর্যকুমার যাদবরা — এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত, ট্রফি গ্রহণ করল না দল

· আপডেট: 29 সেপ্টেম্বর 2025 · ক্রীড়া রিপোর্ট

ইতিহাস রচনা করলো ভারতীয় দল। সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে ভারত আবারও এশিয়া কাপের শিরোপা হাতিয়েছে। ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে মাঠে তিনবার অনায়াসে জয় নিশ্চিত করে ‘শক্তিশালী’ সূর্যরা। কিন্তু ম্যাচ শেষে সবচেয়ে বেশি শিরোনাম হয়েছিল ট্রফি বিতরণী ও মঞ্চ সম্পর্কিত ঘটনায় — ভারতীয় দল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নকভি থেকে ট্রফি গ্রহণ করেনি।

ম্যাচ ও সমাবেশের পর পুরস্কার বিতরণী প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বিত হয়। ঐ সময়ের মধ্যেই ভারতীয় শিবির ট্রফি গ্রহণ না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় বলে বোঝা যায়। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ট্রফি গ্রহণের মুহূর্তে অংশ নেওয়া উচিত ছিল দুই দলের অধিনায়কসহ প্রতিনিধিদের। কিন্তু ফাইনালে ভারত ছিল অনড়। কেউ মঞ্চে ওঠেনি, ট্রফির নিকটবর্তী পিসিবি আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলিঙ্গন পরিহার করা হয়েছিল।

তৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত: পুরস্কার বিতরণীর প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানেই ভারতীয় দল ট্রফি গ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে। এ বিষয়ে দল নেতারা পরে কটাক্ষ না করলেও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ম্যাচের ওপরই গুরুত্বারোপ করা হয়।

ফিল্ডে ভারতের পারফরম্যান্স ছিল শানদার — ব্যাটিং-বলিং মিলিয়ে দলটি একটি পরিকল্পিত শাসন বজায় রেখেছিল। ফাইনালে বিশেষভাবে উজ্জ্বল ছিলেন তরুণ ব্যাটসম্যান তিলক বর্মা, যিনি খেলাটি উল্টে দিয়ে ভারতীয় ধারা বজায় রাখেন এবং প্রয়োজনীয় ইনিংসের দিকে দৌড়ে যান। দলের কঠোর শৃঙ্খলা ও মনোবলই ম্যাচের মূল কারণ বলে কোচ স্টাফরা মন্তব্য করেছেন।

তবে মাঠের বাইরে ঘটনার কড়া প্রেক্ষাপটও ছিল। টুর্নামেন্ট জুড়ে ভারতের কোন খেলোয়াড় পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেননি — এমন ঘটনাই বিতর্কের সূত্রপাত। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানোর পর সূর্যকুমার তাঁর বক্তব্যে পহেলগাঁও হামলার মতো চেয়ারঞ্জনক ঘটনা ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্তব্যও করেন যা সামাজিক মাধ্যমে উষ্মা সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে ভারতের কিছু খেলোয়াড় মাঠে পাকিস্তানি বিহেভিয়ার অপচেষ্টা নিয়ে কড়া আক্ষেপ তুলেছেন।

পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নকভি ক্রীড়া মাধ্যম ও প্রশাসনিক পর্যায়ে শক্তভাবে জড়িত ব্যক্তি — তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরও গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী। পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে উপস্থিতি ও ট্রফি প্রদানকে রাজনৈতিক ও ক্রীড়াগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বানিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে সমালোচকরা দাবি করেছেন। কিন্তু ভারতীয় দল ওই নীতিকে অনুসরণ করেনি — তারা মঞ্চে উঠে না থেকে নিজেদের প্রতিশ্রুতি ও নীতির প্রতি অনড় থেকেছে বলে তাদের সমর্থকরা মনে করেন।

টুর্নামেন্ট শেষে প্রচারিত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সূর্যকুমার বলেন, "মাঠে আমরা আমাদের মিশন সম্পন্ন করেছি। আমরা খেলেছি, জিতেছি এবং আমাদের দেশের মানুষের জন্য খুশি। মাঠের বাইরে যা ঘটে তা নিয়ে আমরা মাঠে অনুষ্ঠিত লড়াই দিয়েই আমাদের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকি।"

অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে ক্রীড়ানীতিগত সিদ্ধান্তের বাইরে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। সমালোচকরা বলছেন, ক্রীড়াঙ্গনে সবসময়ই কূটনৈতিকতা ও কূটকৌশলের ছায়া দেখা দেয়; কিন্তু খেলোয়াড়রা যখন নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে, তখন তা নতুন প্রশ্নও ছুঁড়ে দেয় — ক্রীড়া কি সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় থাকবে নাকি জাতীয় পরিচয় ও কূটনৈতিক বিবাদও মাঠের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে?

এই বিতর্কে পিসিবি-র তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তীব্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলও পরবর্তীতে কোন বিবৃতি দিলে তা খেলে গিয়ে সংবাদে প্রতিফলিত হবে। অন্যদিকে, ক্রিকেটবিশ্বের একাংশ এই ঘটনাকে ক্রীড়ানীতির ধারা ও সম্মান রক্ষার দিক থেকে বিশ্লেষণ করছে — ট্রফি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কেবল একটা প্রতীকী ঘটনা নয়, বরং এর ফলে ক্রীড়ানীতি, কূটনীতি ও সমর্থক সমাজের প্রতিক্রিয়া সবকিছু প্রভাবিত হতে পারে।

ফাইনালের উত্তাপ কমার পরও মাঠ-ভিত্তিক উদযাপন ও দলগত সম্মিলনের মাধ্যমে ভারত তাদের জয়ের আনন্দ উদযাপন করেছে। টিম ম্যানেজমেন্ট ও কোচরা খেলোয়াড়দের মানসিক সমর্থনের প্রশংসা করেছেন। টুর্নামেন্টে ভারতের ধারাবাহিকতা তাদের আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরও সুদৃঢ় করেছে।

সবশেষে বলা যায়— ক্রিকেটের কাহিনি কেবল বল আর ব্যাটের লড়াই নয়; কখনও কখনও তা সম্মান, প্রতিধ্বনি ও জাতীয় ভাবাবেগেরও মঞ্চ। এবারও সেই মিশ্র অনুভূতি ভিড় করেছে মাঠের তারুণ্য ও মাঠের বাইরের নীরবতার মাঝে — সূর্যকুমাররা রীতিমত প্রতিশ্রুতি বজায় রেখে ট্রফি গ্রহণ থেকে বিরত থেকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন, আর মাঠের লড়াই দিয়েই তাদের জবাব পৌঁছে গেল।

সেরা অভিষেক, পাকিস্তান রানার-আপ চেক ফেলে দিলো এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কুলদীপ যাদব ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছেন। আর অভিষেক শর্মা পেয়ে গেছেন টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের খেতাব। ব্যক্তিগত পুরস্কার বিতরণের পর পাকিস্তানি দলকে রানার-আপ হিসেবে সম্মান দেখানো হয়। কিন্তু সেখানে ঘটে চমকপ্রদ ঘটনা। চেয়ারম্যান মহসিন নকভির অনুপস্থিতিতে ACC-এর অন্য এক কর্মকর্তা, আমিরুল ইসলাম, পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের মেডেল প্রদান করেন। এসময় পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আলি আঘা ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার রানার-আপ চেক হাতে পেয়ে তা বিরক্ত হয়ে ছুড়ে ফেলেন।

© Y বাংলা ডিজিটাল ডেস্ক — সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
অনুগ্রহ করে সংবাদ সংক্রান্ত অভিযোগ/উপস্থাপনা পাঠাতে আমাদের -এ ইমেইল করুন।