নেপালে ওলির বিস্ফোরক দাবি: বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে ‘অনুপ্রবেশকারীরা
নেপালে ওলির বিস্ফোরক দাবি: বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে ‘অনুপ্রবেশকারীরা’
সরকারের পতনের পর ১০ দিন পালিয়ে থাকার পর অবশেষে প্রকাশ্যে এলেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংবিধান দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় তিনি দাবি করেন, বিক্ষোভকারীদের হত্যার জন্য নেপালি পুলিশ নয় বরং ‘অনুপ্রবেশকারীরাই’ দায়ী।
ওলি আরও বলেন, সরকার কখনোই সশস্ত্র বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়নি। যেসব স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে গুলি চালানো হয়েছে, তা পুলিশের কাছে নেই। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে গভীর তদন্ত হওয়া উচিত।
- সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়নি।
- স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা পুলিশের কাছে নেই।
- অনুপ্রবেশকারীরাই বিক্ষোভকে সহিংস করেছে।
- বাইরের শক্তির ষড়যন্ত্রে সরকারি ভবন জ্বালানো হয়েছিল।
জেন-জি বিক্ষোভের সূত্রপাত
চলতি মাসের শুরুর দিকেই দুর্নীতি, অনিয়ম ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে যুবসমাজ রাস্তায় নেমে আসে। বিশেষ করে ‘জেন-জি’ প্রজন্মের নেতৃত্বে আন্দোলন দ্রুত গতিশীল হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই ছিল এই বিক্ষোভের মূল চালিকা শক্তি।
কিন্তু বিক্ষোভ দমন করতে সরকার ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। তাতেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। ৮ সেপ্টেম্বর রাজপথে নামা হাজার হাজার তরুণের ওপর গুলি চালানো হয়, যাতে ১৯ জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হন।
ওলির পদত্যাগ ও গোপন আশ্রয়
প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ তীব্র আকার নিলে ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ওলি। সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনী তাঁকে এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের গোপন আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তী কয়েকদিন তিনি সেনা নিরাপত্তায় ছিলেন।
এদিকে রাজনৈতিক সংকট সামাল দিতে সাবেক বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করছেন।
ওলির পুনরাবির্ভাব ও অভিযোগ
৯ দিনের গোপন নিরাপত্তাজীবন কাটিয়ে অবশেষে প্রকাশ্যে আসেন ওলি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি একটি ব্যক্তিগত স্থানে অবস্থান করছেন, যদিও নির্দিষ্ট অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি।
ওলি বলেন, “অনুপ্রবেশকারী ষড়যন্ত্রকারীরাই আন্দোলনকে সহিংস করেছে এবং আমাদের যুবকদের হত্যা করেছে।” তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর পদত্যাগের পর বেশ কয়েকটি সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল, যা বাইরের শক্তির ইঙ্গিত বহন করে।
বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওলির এই বক্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে। কারণ, বিক্ষোভকারীরা সরাসরি তাঁর সরকারকেই দায়ী করছে। তবে তিনি বলছেন, বাইরের শক্তি ও অনুপ্রবেশকারীরাই দাঙ্গা সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে। ভারত ও চীন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চিত্র
নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিতে গণআন্দোলন, সাংবিধানিক সংশোধনী ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছে। এবার ‘জেন-জি’ তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের ধরন নতুন রূপ নিয়েছে।
ওলির দাবির পর এখন প্রশ্ন উঠছে, আসলেই কি অনুপ্রবেশকারীরা গুলি চালিয়েছিল, নাকি এটি রাজনৈতিক দায় এড়ানোর কৌশল? তদন্ত ছাড়া সঠিক তথ্য জানা সম্ভব নয়। তবে এ ঘটনায় নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যে আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, তা বলাই যায়।
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন