কফিন জড়িয়ে স্ত্রী, জুবিন দা ফিরতেই 'স্তব্ধ' অসম — শেষযাত্রায় হাজার হাজার ভক্ত
কফিন জড়িয়ে স্ত্রী, জুবিন দা ফিরতেই 'স্তব্ধ' অসম — শেষযাত্রায় হাজার হাজার ভক্ত

গুয়াহাটি, 21 সেপ্টেম্বর: জনস্রোতের চাপে থমকে যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের চাকা। লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদোলই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শিল্পী জুবিন গর্গের বাড়ির উদ্দেশ্যে ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ছেলেকে শেষবার দেখতে বাড়িতে অপেক্ষায় রয়েছেন ৮৫ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধ — পরিবার ও ভক্তরা শেষ শ্রদ্ধা জানাতে একত্রিত হয়েছেন। আরও পড়ুন :- দূর্গা পুড়ে CAA শিবির
দু'দিন আগের মর্মান্তিক সংবাদ
দু’দিন আগেই প্রিয় শিল্পী ও সবার কাছের মানুষ জুবিন গর্গকে হারিয়েছে অসম। রবিবার সকালে ভূমিপুত্রের দেহ গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পৌঁছলে ভিড় স্তব্ধ হয়ে পড়ে রাস্তায়। লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে হাজির হন। এদিন বিমানবন্দর থেকে কাহিলিপাড়ায় জুবিনের বাড়ি দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য শেষ যাত্রা শুরু করা হয়।
বিমানবন্দর থেকে আবেগঘন মুহূর্ত
দিল্লি থেকে মরদেহ বহনকারী বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে লাগেজ অংশ থেকে কফিনটি বের করে রানওয়ের কাছে রাখা হয়। স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গর্গ পৌঁছেই স্বামীর কফিন জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়েন। এরপর ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান এবং কফিনে একটি অসমীয়া 'গামছা' রাখেন। বিমানবন্দরের কর্মী এবং একই ফ্লাইটে আসা যাত্রীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। রাজ্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মরদেহ গ্রহণের জন্য বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
অভিভূত ভক্ত ও রাস্তার দৃশ্য
বিমানবন্দর থেকে কফিনটি গাঁদা ও জুঁই ফুলে সাজানো একটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। স্ত্রী'র সঙ্গে শেষবারের মতো বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট ছেড়ে বেরিয়ে যায় জুবিনের দেহ। বিমানবন্দরের বাইরে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে থাকা অ্যাম্বুলেন্স দেখে হাজার হাজার ভক্ত 'জয় জুবিন দা' বলে চিৎকার করে। অনেকে শিল্পীর গান গাইছে; কেউ ফোনে লাইভ করছেন, কেউ কাঁদছেন — ছোট থেকে বড়, সবার চোখে অশ্রু।
আহরহ ফুল বর্ষণ করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের প্রিয় গায়ককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গুয়াহাটিতে পৌঁছেছেন। জুবিন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ৪০টি ভাষা ও উপভাষায় ৩৮ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন — সাধারণ মানুষের এই ঘনিষ্ঠতা শেষ দিনেও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
বাসভবনে ও জনসাধারণের শ্রদ্ধা
শিল্পীর কাহিলিপাড়ার বাসভবনে প্রায় দেড় ঘণ্টা জন্য দেহ রাখা হবে, যেখানে পরিবারের সদস্যরা শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন — যার মধ্যে রয়েছেন ৮৫ বছর বয়সী অসুস্থ পিতা। পরিবারের অনুরোধে মিডিয়া ও জনসাধারণকে বাসভবনের পথে প্রবেশ থেকে বিরত রাখা হয়েছে যাতে তারা কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্ত কাটাতে পারেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়সূচি
শুক্রবার রাত থেকেই অর্জুন ভোগেশ্বর বরুয়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সের বাইরে জনসাধারণ জড়ো হতে শুরু করেছে। সোমবার সকাল 9টা থেকে সন্ধ্যা 7টা পর্যন্ত সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে পারা যাবে — সেখানে গণশ্রদ্ধা ও শেষকৃত্যের বিস্তারিত আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত দ্রুত ঘোষণা করা হবে। অসম মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে অনুষ্ঠানের স্থান ও সময় চূড়ান্ত করবে বলে খবর।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের শ্রদ্ধা
এর আগে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা করেছিলেন, গায়কের মরদেহটি কোনও চার্টার্ড ফ্লাইটে রাখা হবে না এবং নিয়মিত ফ্লাইটে দিল্লি থেকে গুয়াহাটিতে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ বহনকারী বিমানটি ভোর সাড়ে চারটেয় নয়াদিল্লি ত্যাগ করে সকাল ৭টায় গুয়াহতিতে পৌঁছায়। দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী মরদেহ গ্রহণ করে শ্রদ্ধা জানান; তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ও অসম রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গান, স্মৃতি ও মানুষের অকণ্ঠ ভালোবাসা
ভক্তরা রাস্তা ও মোবাইলে শিল্পীর বহু স্মৃতিকথা শেয়ার করছেন, গান গাইছেন এবং শেষবারের সাক্ষীর মতো মোবাইলে মুহূর্ত ধারণ করছেন। অনেকেই সাধ্যমত ফুল ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন; কেউ কেউ চোখের জল মুছছেন। এই জনস্রোতই প্রমাণ করে জুবিন গর্গ সাধারণ মানুষের কতটা কাছে ছিলেন — শিল্পীকে শেষকালের সম্মান প্রদর্শিত হচ্ছে পুরো রাজ্য জুড়ে।
📢 সবার আগে আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন
📰 রাজনীতি | ⚽ খেলা | 🎬 বিনোদন | 🌍 আন্তর্জাতিক খবর — সবকিছু এক ক্লিকে।
👍 ফলো করুন Facebook 💬 Join করুন WhatsApp গ্রুপ
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন