পুজোর মণ্ডপে ভাষা-অপমান ও পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন নিয়ে সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পুজোর মণ্ডপে ভাষা-অপমান ও পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন নিয়ে সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই হল মূল কথা। না হলে দেশ টুকরো-টুকরো হয়ে যাবে। সকলেই নিজের মাতৃভাষাকে সম্মান করবেন। কিন্তু বাংলা ভাষায় কথা বললে অত্যাচার হচ্ছে — এটা মানা যায় না।" তাঁর এই কড়া মন্তব্যটি সেখানে উপস্থিত উৎসবপরায়ণ মানুষ এবং শ্রমিক সমাজের প্রতি স্পষ্ট সমর্থন ও সতর্কবার্তা হিসেবে দেখানো হলো। 1
মমতা আরও উল্লেখ করেন যে, বাংলা থেকে লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্রাজ্যে কাজ করতে যান এবং তাঁদের দক্ষতার কারণেই তাঁরা টেনে নেওয়া হয়। তিনি সাফ বলেন, "বাংলা থেকে ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজে যান। তাঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় — কেন? কারণ তাঁদের দক্ষতা, মেধা রয়েছে।" এই সংখ্যা এবং পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্যের নানা জনসাধারণ এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে উদ্বেগ দেখা গেছে। 2
মুখ্যমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী রাজ্যেও অনেক সময়ই ভিন রাজ্য থেকে বহু মানুষ এখানে এসে বসবাস করেছেন; তাঁর বক্তব্যে এমন একবারে স্পষ্ট করা হয় যে রাজ্যে দেড় কোটি বা তার আশপাশে এমন অনিবাসী/অবাঙালি বাস করে—তারা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও হেনস্থা হওয়া উচিত নয়। তিনি এই দিকটিও উদ্যাপিত করেন যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়া প্রত্যেক গণতান্ত্রিক সমাজের কর্তব্য। 3
- স্থান: শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, নগর উত্তর কলকাতা।
- মূল দাবি: ভিন রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতন ও ভাষা-অভিযুক্ত হেনস্থার প্রতিবাদ।
- রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট: রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাগতম বলেছে এবং তাদের কল্যাণার্থে নানা প্রকল্প চালু করা হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রশাসনিক ঘোষণায় প্রতিফলন দেখা গেছে। 4
- সামাজিক প্রভাব: ভাষা-ভিত্তিক উত্তেজনা স্থানীয় অর্থনীতি, শ্রমবাজার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
সেতানুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে রাজ্যের সবাইকে মিলেমিশে থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন—পুজো সালের আনন্দ, ঐশ্বর্য ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে, পাশাপাশি সমাজে বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করতে হবে। পুজো-মহোৎসবকে তিনি এমন সময় হিসেবে উল্লেখ করেন যা মানুষকে একত্রিত করে ও পারস্পরিক সম্মানের বার্তা দেয়। 5
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন বক্তব্য শুধুই সামাজিক সংবেদনশীলতার ইঙ্গিত নয় — এটি রাজ্যের রাজনৈতিক আবহও প্রতিফলিত করে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ভাষাভিত্তিক হেনস্থা এবং রাজ্য ও কেন্দ্রের সম্পর্ক—এসব ইস্যু অনবরত মিডিয়ায় উঠে আসছে এবং তা ভোট-বহুল রাজনৈতিক অভিসন্ধিও তৈরি করতে পারে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কল্যাণমূলক নীতি (যেমন শ্রমশ্রী প্রকল্পের মতো উদ্যোগ) এবং মঞ্চে অভিন্ন বাকপ্রয়োগ ঐক্যের বার্তা পুনর্ব্যক্ত করেছে। 6
পুজো উদ্বোধনের পাশাপাশি মঞ্চে তিনি পুজোর শুভেচ্ছা জানান এবং অভ্যস্ত স্মৃতিচারণ করে বলেন—মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠের স্মৃতি জীবন্ত রাখা উচিত। গান-সংস্কৃতি ও পंडাল-আকর্ষণ নিয়েও তিনি কিছু কথা বলেন, মঞ্চে উপস্থিত গায়ক-শিল্পীদের উদ্দেশ্য করে হালকা টোনে মন্তব্য করেন। এই সব সাংস্কৃতিক বিষয়ে তাঁর স্বাভাবিক অন্তর্নিবিশেষ দর্শকপ্রিয়ভাবে ধরা পড়ে। 7
সমাজকর্মী ও পরিযায়ী শ্রমিক প্রতিনিধিরা মঞ্চে এবং পরে টুইট ও সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন; তাঁরা বলেন, এমন উর্ধ্বতন কণ্ঠ যদি রাজনৈতিক মহলে থেকে সামাজিক সচেতনতা বাড়ায়, তবে বাস্তব জীবনের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় সহায়তা পাওয়া যাবে। একইসঙ্গে নানা সমালোচকও আছেন — যারা বলেন, ভাষা-ভিত্তিক অভিযোগগুলো প্রমাণ করে সমগ্র দেশের সমন্বিত নীতি ও আইন প্রয়োগে দুর্বলতা আছে। 8
অবশ্যই খবরের এই পর্যবেক্ষণে মনে রাখতে হবে — ভাষা ও পরিচয়ের প্রশ্ন অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এগুলোতে জনমত সৃষ্টি হওয়ার সময় বিভিন্ন সূত্র ও ঘটনাপঞ্জি যাচাই করা প্রয়োজন। সরকারি ঘোষণাপত্র, স্থানীয় পুলিশ রিপোর্ট ও শ্রমিকদের নিজের বর্ণনা—এসবই মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। রিপোর্টিং সংস্থাগুলোর উপরও এখানে দায়িত্ব রয়েছে যাতে তথ্য নির্দোষ ও নির্ভরযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা যায়। 9
শেষ পরামে, মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে বারবার যে মেসেজটি দিয়েছেন তা ছিল—"প্রত্যেকের নিজস্বতা আছে, সকলের মত পথ আলাদা; কিন্তু সকলে যখন সমবেত হন, তখন একটাই পথ — সেটা ঐক্যের পথ।" পুজোর এই ক্ষুদে পরিসরে সামাজিক সংহতি ও ভাষার মর্যাদা—দুটি বিষয়কেই তিনি একযোগে তুলে ধরেছেন, যা এই মুহূর্তে রাজ্য ও দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে চলেছে। 10
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন