তামিলনাড়ুতে হেনস্তার শিকার মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যমৃত্যু
তামিলনাড়ুতে হেনস্তার শিকার মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যমৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

ছবি: প্রতীকী, পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের দৃশ্য
Y বাংলা ডিজিটাল ব্যুরো: মুর্শিদাবাদের রামকান্তপুর এলাকার পরিযায়ী শ্রমিক ওয়াহিদ শেখ (২৪) রহস্যজনকভাবে আত্মহত্যা করেছেন। বাড়ি ফেরার পর তিনি নিজের ঘরে ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হন। পরিবারের অভিযোগ, তামিলনাড়ুতে কাজ করার সময় ওয়াহিদ ও তাঁর সহকর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে তিনি বাধ্য হয়ে ধার করে ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু আতঙ্ক ও ঋণের চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পরিবারের দাবি।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত রামকান্তপুর এলাকার প্রায় ১৩ জন শ্রমিক মাসখানেক আগে তামিলনাড়ুতে কাজ করতে যান। তাদের মধ্যে ছিলেন ওয়াহিদ শেখ। সম্প্রতি সেখানে তারা হেনস্তার শিকার হন। তিনজন শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত শ্রমিক খায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন,
"১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আমরা ঘরেছিলাম। রাত সাড়ে ১১টায় আচমকা লাঠিসোঁটা ও অন্য সরঞ্জাম নিয়ে ৩০-৩৫ জন আমাদের রুমে ঢুকে আমাদের উপর চড়াও হয়। আমরা আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাই।"
হামলার পর নিরাপদে বাড়ি ফেরার জন্য ওয়াহিদ বাধ্য হয়ে ধার করে ট্রেনের টিকিট কাটেন। ১৮ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফেরার পর ১৯ তারিখ সকালে তিনি নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হন।
পুলিশ তদন্ত ও পদক্ষেপ
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজপ্রীত সিং জানিয়েছেন,
"কোনও কারণে তামিলনাড়ুর কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার ১৩জন পরিযায়ী শ্রমিকের ঝামেলা হয়। ঘটনায় জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুর্শিদাবাদের তিন পরিযায়ী শ্রমিক। বিষয়টি জানার পর দ্রুত তামিলনাড়ুর পেনালুরপেট থানায় যোগাযোগ করি। পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পেনালুরপেট থানার পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছেন।"
পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, হামলার শিকার শ্রমিকরা মানসিকভাবে চাপে ছিলেন। ধার করা টাকার চিন্তাতেই ওয়াহিদ আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ পরিবার ও ফিরে আসা শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা
বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। জীবনের নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশের অভাবে তারা প্রায়শই মানসিক চাপে থাকেন। ওয়াহিদের মতো ঘটনা নতুন নয়, বরং পূর্বের কয়েকটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলেও মনে করা হচ্ছে।
পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা এবং দূরত্বজনিত কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তামিলনাড়ুর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে এবং হেনস্তার বিষয়ে তদন্ত করছে।
স্থানীয় জনতার প্রতিক্রিয়া
রামকান্তপুরের স্থানীয়রা বলছেন, "পরিযায়ী শ্রমিকরা আমাদের পরিবারের মতো। তামিলনাড়ুর ঘটনা আমাদের জন্য শোকের বিষয়। প্রশাসনের উচিত এমন পরিস্থিতি এড়ানো।"
শ্রমিকদের সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, বিদেশে বা অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বাংলার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্লেষণ ও প্রভাব
ওয়াহিদের আত্মহত্যার ঘটনা সমাজ ও রাজনীতির জন্য সতর্কবার্তা। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা, মানসিক চাপ, এবং ঋণ তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ভবিষ্যতে প্রশাসনের উচিত কঠোরভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের মানসিক স্বাস্থ্য খেয়াল রাখা।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, শ্রমিকদের প্রতি অবহেলা বা হামলার প্রতিক্রিয়া শুধু তাদের নয়, তাদের পরিবারের উপরেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর উচিত এমন ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
📢 সবার আগে নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন
📰 রাজনীতি | ⚽ খেলা | 🎬 বিনোদন | 🌍 আন্তর্জাতিক খবর 👉 সবকিছু এক ক্লিকেই পান আপনার হাতে।
👍 ফলো করুন Facebook