মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিষাক্ত ‘কোল্ড্রিফ’ সিরাপে শিশু মৃত্যু, কেন্দ্র-তামিলনাড়ু সরকারের নীরবতা প্রশ্নে
মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিষাক্ত ‘কোল্ড্রিফ’ সিরাপে শিশু মৃত্যু, কেন্দ্র-তামিলনাড়ু সরকারের নীরবতা প্রশ্নে
প্রকাশক: মহিবুর রহমান শেখ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৫
Y বাংলা ব্যুরো: মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষাক্ত কোল্ড্রিফ সিরাপের ঘটনায় ২০ শিশু মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় কেন্দ্র ও তামিলনাড়ু সরকারের মধ্যে দায় এড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, সিডিএসসিও ইতিমধ্যেই সতর্কতা ও সুপারিশ জানিয়েছিল, কিন্তু তামিলনাড়ু খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (TN-FDA) এই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে এখনও কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি।
কেন্দ্রের তীব্র প্রশ্ন ও তামিলনাড়ুর নীরবতা
কেন্দ্রের তরফে প্রশ্ন করা হয়েছে, এত ছোট্ট প্রাণের ক্ষতি ঘটার পরও কেন সংস্থার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা দায়ের করা হয়নি। কেন কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়নি, যদিও ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DGCI) স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। যদিও কেন্দ্র এই ঘটনাকে রাজনৈতিক খেলা হিসেবে দেখছে না, তবুও তামিলনাড়ু সরকারের নীরবতা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে।
ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থার লঙ্ঘন
তামিলনাড়ু ড্রাগস কন্ট্রোল দফতরের ২৬ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে স্রেসুন ফার্মাসিউটিক্যালসের বিরুদ্ধে ৩৫০-এর বেশি নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। কারখানার পরিবেশ চরম অস্বাস্থ্যকর, যন্ত্রপাতি মরচে ধরেছে এবং রাসায়নিক ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রেড নয় এমন ব্যবহার করা হয়েছে। সিরাপে ডায়িথাইলিন গ্লাইকল (DEG) ধরা পড়েছে, যা অত্যন্ত বিষাক্ত এবং কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ
তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। ১ অক্টোবর মধ্যপ্রদেশ থেকে জরুরি সতর্কতা পাওয়ার পরই রাজ্যে সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। ৩ অক্টোবর উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং সংস্থাকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। ৭ অক্টোবর আরও একটি নোটিশ দিয়ে অপরাধমূলক মামলা শুরু করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্র দাবি করছে, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সংস্থার বিরুদ্ধে এখনও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা দায়বদ্ধতার অভাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংক্রমিত রাজ্যসমূহের পদক্ষেপ
যেসব রাজ্যে কোল্ড্রিফ সিরাপ বিক্রি, বিতরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে:
- মধ্যপ্রদেশ
- রাজস্থান
- তামিলনাড়ু
- উত্তরপ্রদেশ
- পাঞ্জাব
- কেরল
- ঝাড়খণ্ড
- মহারাষ্ট্র
মধ্যপ্রদেশে পুলিশের পদক্ষেপ
মধ্যপ্রদেশ পুলিশ সরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীণ সোনিকে গ্রেফতার করেছে। তবে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA) এই গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করেছে। তাঁদের দাবি, দায়ী হওয়া উচিত সংস্থা ও ড্রাগ নিয়ন্ত্রক দফতরের ব্যর্থতার জন্য, চিকিৎসকদের নয়।
সরকার ছিন্দওয়াড়া ও জবলপুরের দুই ড্রাগ ইনস্পেক্টর এবং ফুড ও মেডিসিন বিভাগের সহ-পরিচালককে সাসপেন্ড করেছে। ড্রাগ কন্ট্রোলারকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক ভোপালে ১৯টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। ১০টি পরীক্ষা ইতিমধ্যে সম্পন্ন, যার মধ্যে ৯টি পাস করেছে কিন্তু একটিতে গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়েছে। কেন্দ্র আরও ছ’টি রাজ্যের ওষুধ উৎপাদন কেন্দ্রে ঝুঁকি ভিত্তিক পরীক্ষা শুরু করেছে।
গ্রামীন স্তরে তদন্ত ও জনসচেতনতা
রাজস্থান এবং অন্যান্য রাজ্যে গ্রামে গ্রামে তদন্ত চালানো হচ্ছে। নিরাপদ ওষুধ ব্যবহারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য ক্ষতিকর সিরাপে বিশেষ সতর্কতা লেবেল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশেও বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে। মহারাষ্ট্রে FDA কোল্ড্রিফ সিরাপের বিক্রি ও বিতরণ নিষিদ্ধ করেছে।
কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপ
এই ঘটনা কেন্দ্র-রাজ্য স্তরের দ্বন্দ্বকেও স্পষ্ট করেছে। কেন্দ্র দাবি করছে, রাজ্য পর্যায়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি সমন্বিত তদন্ত প্রয়োজন। ড্রাগ সংক্রান্ত আইনি ব্যবস্থা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে শিশু ও সাধারণ মানুষের প্রাণ ঝুঁকিতে না পড়ে।
📢 সবার আগে নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন
📰 রাজনীতি | ⚽ খেলা | 🎬 বিনোদন | 🌍 আন্তর্জাতিক খবর 👉 সবকিছু এক ক্লিকেই পান আপনার হাতে।
👍 ফলো করুন Facebook 💬 Join করুন WhatsApp গ্রুপে
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন