গ্রেটা থুনবার্গকে জোর করে ইজরায়েলের পতাকা পরানোর অভিযোগ, নির্বাসিত কর্মীরা নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ছেন
গ্রেটা থুনবার্গকে জোর করে ইজরায়েলের পতাকা পরানোর অভিযোগ, নির্বাসিত কর্মীরা বললেন অপমান-নির্যাতনভিত্তিক আচরণ
গাজার উদ্দেশ্যে নৌকাযাত্রা (ফ্লোটিলা) সংক্রান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘটনায় আটক ও নির্বাসন হয়ে ইস্তানবুলে ফিরে আসা একশত ত্রিশের বেশি কর্মী অভিযোগ করেছেন, গ্রেটা থুনবার্গসহ কয়েকজনের সঙ্গে 'অমানবিক' ও 'অপমানজনক' আচরণ করা হয়েছে। শনিবার ইস্তানবুলে নামার পর বিভিন্ন দেশের কর্মীরা সাংবাদিকদের সামনে তাদের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন এবং কয়েক দফা গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
তুরস্কের বিদেশ মন্ত্রকের বরাত দিয়ে জানা গেছে, নির্বাসিতদের মধ্যে ৩৬ জন তুর্কি নাগরিক ছাড়াও রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, আলজেরিয়া, মরক্কো, ইতালি, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া ও জর্ডনের নাগরিকরা।
আরও খবর পড়ুন , বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: সময়সীমা ঘোষণা, NDA বনাম মহাগঠবন্ধনের লড়াই
মালয়েশিয়ার হজওয়ানি হেলমি ও মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আটককালীন সময়ে তাদের 'মানবেতর' আচরণ করা হয়েছে। হেলমি জানান, গ্রেটাকে ধাক্কা দিয়ে ইজরায়েলের পতাকা জোর করে গলায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং আটকের সময় পরিষ্কার খাবার ও পানীয় জল দেওয়া হয়নি; এমনকি জরুরি ওষুধও ক্রমান্বয়ে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
ইতালির আঞ্চলিক কাউন্সিলর পাওলো রোমানো বলেন, "আমাদের মুখ নিচু করে হাঁটু গেঁড়ে বসতে বলা হয়। নড়লেই মারধরের হুমকি ছিল। গালাগাল, অপমান ও শারীরিক নির্যাতন ছিল।" এ ধরনের বিবৃতিগুলো নির্বাসিত কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষুব্ধতা বাড়িয়েছে।
- গ্রেটা থুনবার্গকে জোর করে ইজরায়েলের পতাকা গলায় পরানো হয়েছে বলে দাবি।
- পর্যাপ্ত খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়নি; ডিহাইড্রেশনের শিকার হয়েছেন কিছু কর্মী।
- শারীরিক কসরৎ ও অপমানজনক আচরণ; কিছুকে শক্ত অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়।
- আইনি সহযোগিতা ও চিকিৎসা সহায়তা ছিল না বলে অভিযোগ।
এক বেসরকারি সূত্রে খবর, সুইডিশ বিদেশ মন্ত্রকের একটি ইমেলে বলা হয়েছে, গ্রেটাকে 'ছাড়পোকার সংক্রমিত সেলে' রাখা হয়েছিল। সেখানে পর্যাপ্ত জল-খাবার না পাওয়ায় এবং অনুপযুক্ত অবস্থানের কারণে তাঁর শরীরে র্যাশ ও ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা গেছে, ইমেলে এই তথ্য জানিয়েছে কাগজপত্র।
নির্বাসিতরা আরও জানিয়েছেন, আটকদলের পক্ষ থেকে কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও তারা নিজ পর্যবেক্ষণে আইন লংঘনের কোনও প্রমাণ পাননি; বরং আচার-সংস্কৃতির সীমানা লঙ্ঘনের কথাই শোনা গেছে। অন্যদিকে ইজরায়েল সরকার সমস্ত অভিযোগকে 'সম্পূর্ণ মিথ্যা' বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং জানায়, আটককৃতদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হয়েছে—খাবার, জল ও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছিল বলে তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ আছে।
এই ফ্লোটিলা গত আগস্ট মাসের শেষে গাজা নিয়ে রওনা দেয়; দীর্ঘদিন ধরেই ইজরায়েলের নৌবন্দুকরণ ও অবরোধের প্রতিবাদে এটি বিভিন্ন বার আয়োজন করা হচ্ছে। ২০০৭ সাল থেকে এই প্রতিবাদী কার্যক্রম চলে আসছে, এবং সাম্প্রতিক ইজরায়েল–হামাস সংঘাতের পর এই অভিযানটির রাজনৈতিক ও মানবিক গুরুত্ব আরও বাড়ে।
ইতালির একটি প্রতিনিধি দল—যার মধ্যে চার জন সংসদ সদস্যও ছিলেন—রোমে ফিরে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করেছে। ইতালীয় সাংসদ আর্তুরো স্কট্টো বলেন, "যারা আইন মেনে চলছিলেন তারা নৌকায় ছিলেন; যেসব নৌকা আটক করা হয়েছে, সেগুলোকে যারা আটক করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।"
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আহ্বান ও কূটনীতি-সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো জোরালো হয়েছে। বিশেষত গ্রেটা থুনবার্গের মতো পরিচিত পরিবেশ ও মানবাধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো বিশ্ব প্রচারে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করেছে।
এপ্রসঙ্গে, ইজরায়েলি বিদেশ মন্ত্রণালয় ঐ অভিযোগগুলো অস্বীকার করলেও, ঘটনাটির স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তীব্র হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকার রক্ষা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে অনুরোধ করা হচ্ছে।
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন