গাজা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর: ট্রাম্প, আল-সিসি ও নেতানিয়াহুর ঐতিহাসিক বৈঠক
গাজার ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি: ট্রাম্প, আল-সিসি ও নেতানিয়াহু এক মঞ্চে

মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হলো সোমবার। বহু বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয়ের পর অবশেষে ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে মিশরের শর্ম এল শেখে। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
চুক্তি অনুযায়ী, উভয় পক্ষ অবিলম্বে অস্ত্রবিরতি বজায় রাখবে, গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেবে এবং সীমান্তে স্থায়ী শান্তি রক্ষায় একটি যৌথ আন্তর্জাতিক তদারকি দল গঠন করা হবে। এছাড়াও, পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বন্দী বিনিময়, পুনর্গঠন সহায়তা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানানো হয়।
- ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর।
- মিশরের তত্ত্বাবধানে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করবে গাজায়।
- জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ তদারকিতে সীমান্ত নজরদারি।
- তিন মাসের মধ্যে বন্দী বিনিময় ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহায়তায় গাজা পুনর্গঠন তহবিল গঠন।
অনুষ্ঠানস্থল শর্ম এল শেখে ট্রাম্প বলেন, “আজ আমরা এমন এক ইতিহাস লিখছি, যা শান্তির ভিত্তি স্থাপন করবে। ইহুদি, মুসলিম ও আরব— সবাই এই মুহূর্তে একসঙ্গে খুশি। যুদ্ধ শেষ।” তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই হলজুড়ে করতালির ঝড় ওঠে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “গাজার জনগণের জন্য এটা নতুন সূচনা। আমি বিশ্বাস করি, আগামী প্রজন্ম শান্তির বাতাসে নিঃশ্বাস নেবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি বলেন, “আমরা চাই, এই অঞ্চলে আর রক্ত না ঝরুক। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টাই শান্তির প্রকৃত ভিত্তি।” তিনি আরও জানান, এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘মিশরীয় পর্যবেক্ষণ মিশন’ আগামী সপ্তাহেই গঠিত হবে, যারা সীমান্তে স্থায়ীভাবে উপস্থিত থাকবে।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “ইজরায়েল কখনও যুদ্ধ চায়নি। আমরা শুধু আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা চেয়েছি। আজকের এই চুক্তি সেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি বহন করছে।” তিনি ট্রাম্প ও আল-সিসির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শান্তির মধ্যস্থতা করার জন্য।
অন্যদিকে, হামাসের রাজনৈতিক শাখা থেকে জানানো হয়েছে, “এই চুক্তি আমাদের জনগণের দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। আমরা আশাবাদী যে, গাজার পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক সহায়তা আমাদের জীবনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।” হামাসের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত না থাকলেও, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তারা এই ঘোষণা দেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি ‘একটি বড় পদক্ষেপ’ হলেও সামনে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে গাজার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং সীমান্ত খোলা রাখার প্রশ্নে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, চুক্তির প্রতিটি ধাপ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে কার্যকর করা হবে।
মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিশরে আগমনের আগে ইজরায়েল সফর করেন এবং সেখানে নেতানিয়াহুর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। মূল আলোচনায় ছিল যুদ্ধবিরতির কাঠামো, গাজার প্রশাসনিক পুনর্গঠন এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তার রূপরেখা।
ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র আগামী এক বছরে গাজার পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগের পক্ষ থেকেও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এসেছে।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী— এই যুদ্ধ শেষ। এখন সময় শান্তি ও পুনর্গঠনের।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “শান্তি টিকিয়ে রাখতে হলে সবাইকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে হবে।”

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, “এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য আশার আলো। কিন্তু বাস্তবায়নের দায়িত্ব এখন পক্ষগুলোর।” একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন রাজধানীতে এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে রাষ্ট্রনেতারা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি আরব ও জর্ডনের রাজপরিবার — সবাই একে ‘নতুন ভোরের সূচনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
📢 সবার আগে নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন
📰 রাজনীতি | ⚽ খেলা | 🎬 বিনোদন | 🌍 আন্তর্জাতিক খবর 👉 সবকিছু এক ক্লিকেই পান আপনার হাতে।
👍 ফলো করুন Facebook 💬 Join করুন WhatsApp গ্রুপে
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন