দুর্গাপুর গণধর্ষণ: সিবিআই তদন্ত দাবি পরিবারের, পুনর্নির্মাণে পুলিশের নজর
দুর্গাপুর গণধর্ষণ: সিবিআই তদন্ত দাবি পরিবারের, পুনর্নির্মাণে পুলিশের নজর
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় নড়ে উঠেছে গোটা রাজ্য। রাজ্য পুলিশের তদন্ত চলছে দ্রুতগতিতে, কিন্তু নির্যাতিতার পরিবারের দাবি—এই ভয়াবহ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে সিবিআইয়ের হাতে মামলা তুলে দেওয়া হোক। তাঁদের মতে, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য আরও পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পেত।

ইতিমধ্যেই শেখ রেয়াজউদ্দিন, অপু বাউড়ি, ফিরদৌস শেখ, নাসিরউদ্দিন ও সফিক শেখ নামে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে। দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে এবং পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। সমস্ত প্রক্রিয়াই ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে রেকর্ড রাখা হয়েছে।
- পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
- নির্যাতিতার পোশাক ও অভিযুক্তদের পোশাক বাজেয়াপ্ত।
- ঘটনাস্থলে পুনর্নির্মাণ ও ভিডিওগ্রাফি সম্পন্ন।
- পরিবারের দাবি—সিবিআই তদন্ত হলে সত্য আরও স্পষ্ট হবে।
ওড়িশার বাসিন্দা নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, “রাজ্য পুলিশ ভালো কাজ করছে বলে শুনেছি, কিন্তু আমি মনে করি সিবিআই তদন্ত হলে আরও ভালো হত। ওরা আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, “আমার মেয়ে এখন কিছুটা স্থিতিশীল। ডাক্তাররা সরাসরি কথা বলেননি, তবে অবস্থার উন্নতির কথা শুনেছি। এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, মেয়েটিকে অন্য কলেজে ভর্তি করা।”
নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন ওড়িশা মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরাও। তাঁরা ভুক্তভোগীর পুনর্বাসনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন এবং বলেন, মেয়েটি যাতে নিরাপদ পরিবেশে আবার পড়াশোনা শুরু করতে পারে, সেই দিকটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্যাতিতার বাবা জানান, “মেয়েকে ওখানে আর পড়াতে চাই না। আমি ওড়িশা মহিলা কমিশনের কাছে আবেদন করেছি যেন ওকে ভালো কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মেয়ের পাশে তাঁরা থাকবেন।”
অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের নিয়ে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয় পুনর্নির্মাণের জন্য। ধৃতদের মধ্যে দু'জনকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতেও নিয়ে গিয়ে স্থানীয় তথ্য যাচাই করা হয়। ঘটনার সময় কে কোথায় ছিল, কীভাবে ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল—এসব বিষয়ে পুনর্নির্মাণে খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন।
দুর্গাপুর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “তদন্ত দ্রুত এগোচ্ছে। আদালতের নির্দেশ ও ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি করা হবে।” প্রাথমিক রিপোর্টে পুলিশের ধারণা, ঘটনাটি পরিকল্পিত। তাই প্রযুক্তিগত ও ডিজিটাল প্রমাণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্যজুড়ে এই ঘটনার নিন্দা চলছে। বিভিন্ন সংগঠন নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছে। মহিলা সংগঠন ও শিক্ষার্থী সংগঠনগুলির দাবি, দোষীদের যেন উদাহরণমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। নাগরিক মহলের অনেকেই বলছেন, রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি সিবিআই তদন্তের দাবি যুক্তিযুক্ত, কারণ এ ধরনের সংবেদনশীল ঘটনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্ত অত্যন্ত জরুরি।
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন নির্যাতনের মামলায় ভুক্তভোগীর সুরক্ষা, প্রমাণ সংরক্ষণ এবং সামাজিক পুনর্বাসন সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই তদন্তের পাশাপাশি মেয়েটির মানসিক পুনর্বাসন ও উচ্চশিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।
সমাজকর্মীদের দাবি, “এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনকে আরও কড়া হতে হবে।” দুর্গাপুর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ ইতিমধ্যেই কলেজে নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।
সবশেষে, নির্যাতিতার বাবার একটাই আবেদন—“দোষীরা যেন আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি পায়, আর কোনও মেয়ের সঙ্গে যেন এমনটা না ঘটে।” সেই আবেদন আজ রাজ্যের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
📢 সবার আগে নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন
📰 রাজনীতি | ⚽ খেলা | 🎬 বিনোদন | 🌍 আন্তর্জাতিক খবর 👉 সবকিছু এক ক্লিকেই পান আপনার হাতে।
👍 ফলো করুন Facebook 💬 Join করুন WhatsApp গ্রুপে
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন