উত্তরবঙ্গের ধস ও বন্যা: ১৭ জনের মৃত্যু, পর্যটক আটকা, বিপর্যস্ত রাস্তা ও বনাঞ্চল

উত্তরবঙ্গের ধস ও বন্যা: ১৭ জনের মৃত্যু, পর্যটক আটকা, বিপর্যস্ত রাস্তা ও বনাঞ্চল

উত্তরবঙ্গের ধস ও বন্যা: ১৭ জনের মৃত্যু, পর্যটক আটকা, বিপর্যস্ত রাস্তা ও বনাঞ্চল

Y বাংলা ব্যুরো — আপডেট: ৫ অক্টোবর ২০২৫
উত্তরবঙ্গে ধস ও বন্যা
দার্জিলিং ও মিরিক অঞ্চলে ধস ও বৃষ্টির কারণে রাস্তা বন্ধ ও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (ছবি: প্রতিনিধি)

উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চল টানা বৃষ্টি ও ধসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে দার্জিলিং, মিরিক এবং কালিম্পঙের বহু এলাকা জলের তলায় তলিয়ে গেছে। পাহাড় ধসে রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বহু পর্যটক আটকে পড়েছেন। সরকারিভাবে এখনও পর্যটকের সঠিক সংখ্যা জানানো হয়নি, তবে প্রশাসন নিশ্চিত করেছে, এটি খুব কম নয়। পর্যটকদের বিভিন্ন পকেট রুট ব্যবহার করে সমতলে আনার চেষ্টা চলছে।

দুধিয়া ব্রিজ ভাঙায় শিলিগুড়ি ও মিরিকের মধ্যে মূল সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, মিরিক সৌরেনিতে আটকে থাকা পর্যটকদের নল-পটং-লোহাগড় হয়ে শিলিগুড়িতে পাঠানো হচ্ছে। ধসের কারণে শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রোহিণী রোডও বন্ধ রয়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে হিলকার্ট রোড। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং পর্যন্ত কিছু পকেট রুট খোলা থাকায় যানবাহন চলাচল সম্ভব, তবে সরাসরি যোগাযোগ এখন বন্ধ।

জাতীয় সড়ক ও যোগাযোগ:

তিস্তা নদীর উর্ধ্বমুখী ফুঁসের কারণে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ। শিলিগুড়ি থেকে সিকিম-কালিম্পঙের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে লাভা-গরুবাথান ও শিলিগুড়ি-কালিম্পঙের পানবু রোড খোলা রয়েছে। এই সব রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য বিকল্প রুট ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছে।

শনিবার রাত বালাসন নদীর উপর দুধিয়ার লোহার সেতুর একাংশ ভেঙে শিলিগুড়ি-মিরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সৌরেনির কাছে দারাগাঁওয়ে ধস নামে এবং একটি বাড়ি ধসে যায়। আপার দুধিয়া বা ডাম্ফেডার এলাকায় চার থেকে পাঁচটি বাড়ি ধসে জলের তলায় চলে গেছে। দার্জিলিঙের হোমস্টে এবং বিএসএফ ক্যাম্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিরিক অঞ্চলে ৯ জন, সুকিয়াপোখরিতে ৭ জন এবং বিজনবাড়ি এলাকায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আরও খবর পড়ুন , এনডিএর সমন্বয় বৈঠক — আসনবণ্টন ঘিরে উসকি, ধর্মেন্দ্র প্রধানের মধ্যস্থতা

উত্তরবঙ্গের বন্যাপ্রাণও বিপর্যস্ত। গরুমারার জঙ্গল লাগোয়া জলঢাকা নদীতে একটি গন্ডারের মৃতদেহ ভেসে এসেছে। নকশালবাড়িতে মেচি নদীর প্রবাহে একটি হস্তিশাবক তলিয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর জল দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় হস্তিশাবকটি প্রাণ হারিয়েছে। ৩০টি হাতির দল নদী পেরোচ্ছিল, যার মধ্যে একটি দলছুট হয়ে পড়েছে।

রাতভর বৃষ্টিতে দার্জিলিং, মিরিক, সুখিয়াপোখরির অবস্থা বেহাল। উত্তরবঙ্গের প্রায় সব নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ডুয়ার্স এবং উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান থেকে ভেসে আসা একটি গন্ডারের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যা দৃশ্যমান করে দিয়েছে বিপর্যয়ের পরিসর।

বন্যা ও বিপর্যয়ের মাত্রা:

বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত, রাস্তা বন্ধ, যানবাহন চলাচল ব্যাহত, পর্যটক ও স্থানীয় মানুষ আতঙ্কিত। নদীর জলস্তর বৃদ্ধি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা জল সমতলে বিপর্যয় তৈরি করেছে। প্রশাসন উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম তৎপর।

শিলিগুড়ি, মিরিক ও দার্জিলিংয়ে পর্যটকরা এখনও আটকে রয়েছেন। প্রশাসন তাদের নিরাপদে সমতলে নামানোর জন্য বিকল্প রুট ব্যবহার করছে। এতে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যদিও কয়েকশো পর্যটক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে উদ্ধার হয়েছেন।

ধসের ফলে বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ থাকায় নেটওয়ার্ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেনা ও স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছে এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।

বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি নদী ও খালগুলি ফেটে গিয়ে জল ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছে। তিস্তা, দুধিয়া, মেচি নদী এবং অন্যান্য নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সমতল এলাকার অনেক জায়গা প্লাবিত হয়েছে। পর্যটকরা তাদের হোটেল, হোমস্টে বা খোলা জায়গা থেকে নিরাপদ স্থানে চলে আসার চেষ্টা করছে।

দার্জিলিং জেলার বহু এলাকা এখনও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে। পানীয় জল সরবরাহ সীমিত। প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে পানীয় জল ও খাবার বিতরণ করছে। পাহাড়ি অঞ্চলে স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকরা নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই উদ্ধারকারীরা ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে এসেছেন। তবে পাহাড়ি এলাকার ধসের প্রকোপ এবং নদীর জলবৃদ্ধির কারণে উদ্ধার অভিযান খুব ধীরগতিতে চলছে। পাহাড়ি রাস্তাগুলো এখনো বিপজ্জনক।

শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পঙ, মিরিক পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচল সীমিত। প্রশাসন প্রতিদিন নতুন বিকল্প রুট খোলার চেষ্টা করছে। স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি সেনা ও NDRF টিম উদ্ধারকাজে নিয়োজিত। পর্যটক ও স্থানীয় মানুষদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চলও এই বন্যার কবলে পড়েছে। জল ঢুকেছে বনাঞ্চলে, যার ফলে বন্যপ্রাণীর বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত। হাতি, গন্ডার ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী নদী পেরোতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৩-৪ দিনে আরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পাহাড়ি এলাকা ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রশাসন জনসচেতনতা বাড়াতে টেলিভিশন, রেডিও ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সতর্কতা জারি করেছে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে উত্তরবঙ্গের স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটকদের হোটেল এবং হোমস্টে থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হচ্ছে। নদীর ধারের বসবাসকারী মানুষদেরও স্থানান্তর করা হচ্ছে।

উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চল ও সমতল এলাকায় বন্যা, ধস ও নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে বিপর্যয় চলতে পারে। প্রশাসন, সেনা, NDRF এবং স্থানীয় জনগণ উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকুন, বিকল্প রুট ব্যবহার করুন এবং প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলুন। পর্যটকরা যাতে নিরাপদে সমতলে নামতে পারে, তা নিশ্চিত করতে রাস্তাগুলো পুনরায় খোলা হচ্ছে।

উত্তরবঙ্গের বন্যা ও ধসের এই দুঃসাহসিক পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতির অপ্রত্যাশিত শক্তি কতটা ভয়ংকর হতে পারে। প্রশাসন ও উদ্ধারকারীরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য।

আরও খবর পড়ুন , বিহার বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫: সময়সীমা ঘোষণা, NDA বনাম মহাগঠবন্ধনের লড়াই

Y বাংলা ব্যুরো © ২০২৫। সকল অধিকার সংরক্ষিত।

📢 সবার আগে নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন

📰 রাজনীতি | ⚽ খেলা | 🎬 বিনোদন | 🌍 আন্তর্জাতিক খবর 👉 সবকিছু এক ক্লিকেই পান আপনার হাতে।

👍 ফলো করুন Facebook 💬 Join করুন WhatsApp গ্রুপে

No comments:

আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন

Featured post

দুর্গাপুর গণধর্ষণ: সিবিআই তদন্ত দাবি পরিবারের, পুনর্নির্মাণে পুলিশের নজর দুর্গাপুর গণধর...

Search This Blog

Powered by Blogger.