ডিভিসি জলছাড়া বিতর্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ, ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া
ডিভিসি জলছাড়া বিতর্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ, ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া
y ডিজিটাল ডেস্ক: পুজোর মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের নদী তীরবর্তী এলাকায় আবারও জলছাড় নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তোপ দাগেছেন। তাঁর অভিযোগ, ডিভিসি রাজ্যকে আগাম নোটিশ না দিয়ে এমন ‘বেপরোয়া’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাংলার মানুষের উৎসব উদযাপনের মধ্যে বাধা সৃষ্টি করছে।

ডিভিসির অবস্থান
ডিভিসির এক কর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানিয়েছেন, ‘‘ডিভিসি নিজের ইচ্ছায় জল ছাড়ে না। জল ছাড়তে আমরা বাধ্য। এবং আবারও বলছি, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সরকারকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি সরাসরি তোপ দাগেন। মমতা বলেন, “আনন্দ, উল্লাস এবং নতুন আশার সময়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে শান্তিতে উৎসব শেষ করতে দেওয়ার বদলে, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে আগাম বার্তা না-দিয়ে ৬৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়ে দিয়েছেন।”
বৃষ্টিপাত ও নিম্নচাপের প্রভাব
গত এক সপ্তাহ ধরে ঝাড়খণ্ডে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। পশ্চিম বর্ধমানেও বর্ষণ অব্যাহত। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ, সর্বত্রই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই আবহে ডিভিসির জলাধারগুলি টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। শুক্রবার বিকেলে মাইথন জলাধার থেকে ৪২,৫০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৭,৫০০ কিউসেক জল ছাড়া শুরু করেছে ডিভিসি। ফলে দক্ষিণবঙ্গের নদী তীরবর্তী এলাকায় প্লাবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
পূর্ববর্তী পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
গত জুন-জুলাই মাসেও ডিভিসি হাজার হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল। সেই সময় নিম্নচাপের কারণে বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও অন্যান্য জেলায় বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। রাজনৈতিকভাবে তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিসির সিদ্ধান্তকে বাংলার জনগণের প্রতি ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শ্রমিক ও ডিভিআরআরসি পদত্যাগ
ডিভিসির জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিভিআরআরসি) থেকে রাজ্যের দুই প্রতিনিধি পদত্যাগ করেছেন। শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি ডিভিসির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শ্রমিকদের স্বার্থে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্য প্রশাসন আরও সতর্ক হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা ও জনসংযোগ
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা কালীঘাটে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আরামবাগের সাংসদ মিতালী বাগও উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূল নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ডিভিসি-র জল ছাড়া মোকাবিলায় কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাপতি উত্তরা সিংহ, অজিত মাইতি, প্রদ্যোৎ ঘোষদের উদ্দেশে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার তফসিল দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ডিভিসি জলছাড়ের পরিণতি
দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা আবারও প্লাবনের ঝুঁকিতে। আসানসোল, দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চলে গত দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এই জল দামোদর নদীতে মিশছে। দুর্গাপুরে রাজ্য সেচ দফতরের জলাধারের ক্ষমতা অতিক্রম করেছে। প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী গ্রাম ও শহরের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর তোপ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “এই বেপরোয়া পদক্ষেপ আমাদের পবিত্র উৎসবের মধ্যে দুর্দশা তৈরির প্রচেষ্টার কম নয়। একতরফা পদক্ষেপ লজ্জাজনক এবং অস্বীকার্য।” সামাজিক মাধ্যমে রাজ্যবাসী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। অনেকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “নোটিশ পেলে হয়তো এই বিপর্যয় এড়ানো যেত।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডিভিসির জলছাড় নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতারা জনসচেতনতা তৈরিতে মাঠে নামবেন। নদী তীরবর্তী এলাকা ও জলাধার পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম কার্যকর করা হবে। রাজ্যবাসীর নিরাপত্তা ও উৎসব উদযাপন নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
📢 সবার আগে নিউজ আপডেট পেতে আমাদের ফলো করুন
📰 রাজনীতি | ⚽ খেলা | 🎬 বিনোদন | 🌍 আন্তর্জাতিক খবর 👉 সবকিছু এক ক্লিকেই পান আপনার হাতে।
👍 ফলো করুন Facebook 💬 Join করুন WhatsApp গ্রুপে
No comments:
আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন