সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর হুঁশিয়ারি: পাকিস্তান যদি মানচিত্রে থাকতে চায়, সন্ত্রাসে মদত বন্ধ করুন

সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর হুঁশিয়ারি: পাকিস্তান যদি মানচিত্রে থাকতে চায়, সন্ত্রাসে মদত বন্ধ করুন

সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর হুঁশিয়ারি: পাকিস্তান যদি মানচিত্রে থাকতে চায়, সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করুক

ডিজিটাল ডেস্ক — আপডেট: 03 অক্টোবর 2025 | রিপোর্টার: Y বাংলা ডিজিটাল ব্যুরো
সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী - ফাইল ছবি
সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী— সীমান্ত ও সন্ত্রাসবিরোধী নীতিতে তাঁর দৃঢ় বার্তা।
সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী কড়া সতর্কবার্তায় বলেছেন, পাকিস্তান যদি সত্যিই মানচিত্রে টিকে থাকতে চায়, তবে তাদের অবিলম্বে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অপারেশন সিঁদুরের সময় ভারত যে সংযম দেখিয়েছিল, এবার আর তা হবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন। সীমান্তে ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসের প্রেক্ষাপটে তাঁর এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

গত কয়েক মাস ধরে কাশ্মীর ও সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলা ও অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়ে চলেছে। সেনাপ্রধানের মতে, পাকিস্তানের ভেতরে থাকা জঙ্গিঘাঁটি ও তাদের মদতদাতা রাষ্ট্রযন্ত্র সন্ত্রাস বন্ধে কোনও সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না। তিনি আরও বলেছেন, “ভারত এবার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। অপারেশন সিঁদুর ১.০-এর সময় আমরা সংযম দেখিয়েছিলাম, কিন্তু ভবিষ্যতে আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। এবার আমরা এমনভাবে জবাব দেব যাতে পাকিস্তানকে ভাবতে হবে তারা বিশ্ব মানচিত্রে থাকবে কি না।”

অপারেশন সিঁদুর মূলত গত এপ্রিল-মে মাসে শুরু হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের মধ্যে একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। ভারতীয় সেনার ওই অভিযানে ১০০ জনের বেশি জঙ্গি ও প্রায় ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। যদিও পাকিস্তান সরকারি ভাবে এই সংখ্যা মানতে অস্বীকার করেছে।

অন্যদিকে, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক ভয়াবহ হামলায় ২৬ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়। দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF), যা লস্কর-ই-তইবার সহযোগী সংগঠন। এই হামলার মূল পরিকল্পনায় স্থানীয় এক জঙ্গির ভূমিকা ছিল বলে জানা গিয়েছে। সেনাপ্রধান জানান, এটাই প্রমাণ করে পাকিস্তান শুধু সীমান্তের ওপার থেকে নয়, কাশ্মীরের ভেতর থেকেও সন্ত্রাস ছড়াতে মদত দিয়ে চলেছে।

প্রধান তথ্য সংক্ষেপ:
  • ২২ এপ্রিল: পহেলগাঁওয়ে TRF-এর হাতে ২৬ নিরস্ত্র মানুষ নিহত।
  • ৭ মে ভোর: ভারতীয় সেনার পাল্টা আক্রমণ — পাকিস্তান ও POK-এ অন্তত ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস।
  • পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান ভারতের জনবহুল এলাকা ও সেনাঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা চালায়।
  • ভারতের পাল্টা প্রত্যাঘাতে অন্তত ১১টি পাক বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত।

সেনাপ্রধান দ্বিবেদীর বার্তায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সৈন্যদের প্রস্তুতি। তিনি সেনাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “নিজেদের প্রস্তুত রাখুন। ঈশ্বর চাইলে, সুযোগ শিগগিরই আসবে।” তাঁর এই মন্তব্যে বোঝা যায়, ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজনে আরও বড়সড় সামরিক অভিযান চালানো হয়, তাহলে সেনারা প্রস্তুত থাকবে।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেনাপ্রধানের এই মন্তব্য শুধুমাত্র সামরিক কৌশলের ইঙ্গিত নয়, এটি একটি কূটনৈতিক বার্তাও। পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপে ফেলার পাশাপাশি দেশের ভেতরে জনমতকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যও রয়েছে। সীমান্তে যে কোনও ধরনের আগ্রাসন হলে ভারত জোরালো প্রতিক্রিয়া জানাতে দ্বিধা করবে না— এটাই মূল বক্তব্য।

তবে এই পরিস্থিতি কেবল সামরিক দিক থেকে নয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ভারতীয় সরকারের কূটনৈতিক শাখা পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে চীনের অবস্থান এখনও পাকিস্তানের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে।

এদিকে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। লাগাতার অনুপ্রবেশ ও গুলির লড়াইয়ের কারণে বহু পরিবারকে ঘরছাড়া হতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকারগুলো সেনার সঙ্গে সমন্বয় করে শরণার্থী শিবির তৈরি করেছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের ভেতরেও চাপ বাড়ছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটিতে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ তীব্র হয়েছে। পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, সন্ত্রাসে মদত দিয়ে দেশটি এক ভয়াবহ অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে। সেনাপ্রধানের বক্তব্য যেন পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও একবার কঠোর সতর্কবার্তা।

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি। সরকারি ভাবে ১০ মে অপারেশন শেষ ঘোষণা করা হলেও সেনাপ্রধানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে কার্যত অপারেশন থেমে যায়নি। গোপনে এখনও অভিযানের ধারা চলেছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযানের কৌশলগত লক্ষ্য হলো সন্ত্রাসের শিকড় কেটে ফেলা।

যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করতে হলে সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগও জরুরি। স্থানীয় জনগণকে বিশ্বাসে এনে উন্নয়নমূলক কাজ বাড়াতে হবে। না হলে জঙ্গি সংগঠনগুলো সহজেই যুব সমাজকে প্রলোভন দেখিয়ে দলে টানতে পারবে।

ভারত সরকারের নীতি এখন দ্বিমুখী— একদিকে কঠোর সামরিক পদক্ষেপ, অন্যদিকে কাশ্মীরে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি। সেনাপ্রধানের বার্তা সেই নীতিকেই আরও শক্তিশালী করেছে।

সবমিলিয়ে, উপেন্দ্র দ্বিবেদীর বার্তা পাকিস্তানের জন্য কঠিন সতর্কবার্তা। ভারতের সেনা ও কূটনৈতিক মহল দু’দিকেই প্রস্তুত। পরিস্থিতি কেমন রূপ নেবে তা সময়ই বলবে, তবে নিশ্চিত যে ভবিষ্যতে আর কোনও ধরনের আগ্রাসন বরদাস্ত করবে না ভারত।

সেনাপ্রধানঅপারেশন সিঁদুরপাকিস্তানসন্ত্রাসবাদভারতীয় সেনা

© 2025 Y বাংলা ডিজিটাল ব্যুরো — সর্বস্বত্ব মুক্ত ও পুনঃপ্রকাশযোগ্য প্রতিবেদন। তথ্য সরকারি ও স্বাধীন সূত্রের ভিত্তিতে উপস্থাপিত।

Y বাংলা নিউজ — Facebook এ যোগ দিন
আমাদের অফিশিয়াল ফেসবুক প্রোফাইলে যোগ দিয়ে আপডেট পেতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।
যোগ দিন — Y বাংলা নিউজ শেয়ার করুন

No comments:

আপনার মতামত এর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 👇
👉 যদি মনে হয় বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, পোস্টটি শেয়ার করুন 🔄নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন

Featured post

দুর্গাপুর গণধর্ষণ: সিবিআই তদন্ত দাবি পরিবারের, পুনর্নির্মাণে পুলিশের নজর দুর্গাপুর গণধর...

Search This Blog

Powered by Blogger.